Campus E-Center, Birganj

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভ্যালেন্টাইন ডে : নিসর্গের জানালা

পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা পাল তুলে নিসর্গের দিকে যেন ছুটে যায় ১৪ ফেব্রয়ারি দিনটিতে। ভালোবাসা দিবস অনবদ্য এক ইতিহাস। যা মানুষের হৃদস্পন্দনে এনে দেয় প্রশান্তির রঙিন ছায়া। দিবস তরুণ-তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং উদযাপিতও হচ্ছে ব্যাপকভাবে। সময়ের সন্ধিতে প্রিয় মানুষের সাথে প্রিয় ক্ষণকে উপভোগ্য করে থাকে নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ফুল, কবিতা, কার্ড উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। তবে সময়ের বিবর্তনে ধারার ভিন্নতা এখন লক্ষ্যণীয় পরিববর্তিত হচ্ছে। মুঠোফোন, এসএমএস ইন্টারনেটের ফলে ভালোবাসা মুহূর্তেই কাছাকাছি নিয়ে আসে প্রিয় মানুষটিকে। প্রযুক্তির কল্যাণে ভ্যালেন্টাইন ডে এখন পেয়েছে নতুন মাত্রা। ভালোবাসা সামাজিক প্রেক্ষাপটকে করে তোলে সুন্দর। মানুষের জকে করে তোলে সমৃদ্ধ।

ভালোবাসা দিবসটির ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভ্যালেন্টাইন খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ না করায় তাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা থেকেই এর উৎপত্তি। ২৬৯ খ্রিস্টব্দের ১৪ ফেব্রয়ারি তার ্যাগের ওই দিনটি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। আবার কিছু কিছু বিশেজ্ঞতের মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারাগারে বন্দি থাকার সময় কারারীর মেয়েকে তার স্বারিত একটি চিঠি দেন, যাতে লেখা ছিল, লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসার এমন স্মৃতিকে জড়িয়েই পরবর্তী সময়ে ভ্যালেন্টাইন ডে প্রচলন শুরু হয়। তবে অপর একটি ধারণা মতে জানা যায়, রোমান সম্রাট কডিয়াসের সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন গির্জার ধর্মযাজক ছিলেন। কডিয়াস তার সাথে মতবিরোধের জন্য প্রথমে তাকে কারাবন্দি করেন। পরে তার মৃতুদণ্ড কার্যকর করেন। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে ১৪ ফেব্রয়রি ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে ভ্যালেন্টাইন ডে নামে পালিত হতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে ১৪ ফেব্রয়ারি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে এবং সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বছরে একবার নারী পুরুষের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য শুধু ভ্যালেন্টাইন নামক অনুষ্ঠানকে বেছে নেয়া উচিত নয়।
ভালোবাসা সর্বজনীন। পৃথিবীতে ভালোবাসা দিবসটিকে নিয়ে রয়েছে নানান প্রথা। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সেই ত্যাগের কাহিনীকে ঘিরে অনেক দেশে রয়েছে হাজারও প্রথা, কুসংস্কার। ভালোবসার জন্য শুধু ভ্যালেন্টাইন নয়, যুগে যুগে পৃথিবীর বহু দেশে অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছেন। ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রয়ারি ছিল রোমান দেবদেবীদের রানী জুনোর সম্মানে পবিত্র দিন। রোমানরা তাকে নারী বিবাহের দেবী বলে বিশ্বাস করত। দিনটি অনুসরণ করে পরের দিন ১৫ ফেব্রয়ারি পালিত হতো লুপারকেলিয়া উৎপত্তি বিশেষ ভোজ। সে সময় তরুণ এবং তরুণীদের জীবনযাপন ব্যবস্থা ছিল সম্পর্ণ পৃথক। কিন্তু তরুণদের জন্য দৃষ্টি আকর্ষন নামে একটি ভিন্নধর্মী প্রথা ছিল লটারি লুপারকেলিয়া উৎপত্তি সন্ধ্যায় কাগজের টুকরায় তরুণীদের নাম লিখে একটি পাত্রে জমা করা হত। সেখান থেকে ্কজন তরুণ একটি করে কাগজের টুকরা তুলত এবং কাগজের টুকরায় যে তরুণীর নাম লেখা থাকত ওই উৎসবের সময় পর্যন্ত সে তাকে তার সঙ্গী হিসেবে পেত। পরে কখনো কখনো ওই দুজনের জুটি পুরো বছর ধরে টিকে থাকত এবং প্রায়শ তারা একে অপরের প্রেমে পড়ত এবং সব শেষে তা বিয়ে পর্যন্ত গড়াত।
সম্রাট কডিয়াসের শাসনামলে রোম কয়েকটি জনবিরোধী এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। হিংস্র প্রকৃতির কডিয়াস সে সময় তার সেনাবাহিনীতে যশেষ্ট সংখ্যক সৈন্য ভর্তি না হওয়া নিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছিলেন। রোমান পুরুষরা তাদের পরিবার ভালোবাসা ত্যাগ করে যুদ্ধে না যাওয়াকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেন। ফলে কডিয়াস সমগ্র রোমে সব ধরনের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সে সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমের একজন ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি এবং সেন্ট ম্যারিয়াস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দিত এবং বিবাহিত যুগলদের সহযোগিতা দিতেন। কারণে রোমের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গ্রেফতার করে কারাবান্দি করেন। ভ্যালেন্টাইন বন্দি থাকা অবস্থায় অনেক তরুণ তাকে দেখতে যেত এবং কারাকরে জানালা দিয়ে তার উদ্দেশ্যে লেখা চিরকুট ফুল দিয়ে তাদের ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত। হাত নেড়ে তাকে জানাত যে, তারা যুদ্ধ নয়, ভালোবাসায় বিশ্বাসী এদের মধ্যে একজন ছিল কারারীর মেয়ে। তার বাবা তাকে ভ্যালেন্টাইনের সাথে সাক্ষাৎ কতে এবং তার সাথে কথা বলতে সুযোগ করে দিত। মেয়েটি তাকে তার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কডিয়াসের নির্দেশ অমান্য করে তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দেওয়া এবং ভালোবাসায় তার সমর্থনের কথা জানায়। এক সময় তারা এক অপরের বন্ধু হয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইনের শিরোচ্ছেদ করে হত্যার দিনে তিনি মেয়েটিকে তার বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। এতে তিনি লিখেছিলেন, লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন বিচারকের নির্দেশ অনুসারে সে দিনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

প্রথম ভালেন্টাইন কার্ড পাঠানোর প্রচলন শুরু হয় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিস্ এস্থার হাওল্যান্ডে। আজ থেকে শতবর্ষ আগে দিনে তরুণীরা রোদে একটি বাটিতে পরিস্কার পানি রেখে তার ওপর চেয়ে থাকত। ধারণা করা হতো, যার ছবি ওই পানিতে ভেসে উঠবে সে- হবে তার কাক্সিক্ষত ভ্যালেন্টাইন। কোথাও ফেব্রয়ারির ১৪ তারিখে তরুণ-তরুণীরা তাদের জামার হাতায় কাক্সিক্ষত ভালেঅবাসার মানুষটির নাম লিখে সপ্তাহজুড়ে ঘুরে বেড়াত। তারা ধরেই নিতো, এর ফলে সহজেই কাছে পাবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে। আবার কোন কোন দেশে ১৪ ফেব্রয়ারি অবিবাহিত ছেলেরা মেয়েদের নতুন পোশাক উপহার হিসেবে পাঠাত এবং মেয়েটি ওই পোশাক গ্রহণ করলে ধরে নেয়া হতো, মেয়েটি তাকে বিয়ে কতে রাজি আছে। ওইসব দেশে কিছু লোকদের ভ্যালেন্টাইনের ওপর বিশ্বাস আরো একধাপ এগিয়ে। যেমন ১৪ ফেব্রয়ারিতে যদি কোনো মেয়ে তার মাথার ওপর একটি ফিতা উড়ে যেতে দেখে তাহলে তার বিয়েহবে কোন নাবিকের সাথে, যদি সে একটি চড়ুই পাখি দেখে তবে তার বিয়ে হবে একজন দরিদ্র লোকের সাথে, কিন্তু সে হবে খুবই সুখী। আর যদি সে সোনালি রঙের মাছ দেখে তবে তার বিয়ে হবে একজন প্রভাবশালী ধনাঢ্য লোকের সাথে।
কোন প্রথা বা কুসংস্কার নয়, ১৪ ফেব্রয়ারি ভালোবাসা দিবসের ফুলেল সৌরভ ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের প্রত্যেকরই আঙিনায়। ভালোবাসা জড়ানো তারুণ্যের রঙিন সুতোয় বোনা সুখস্বপ্নগুলো যেন চিরস্থায়ী হয়ে ফুটে থাকে সারাক্ষণ সারাটি সময়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ভালোবাসার নির্লোভ সম্মোহন আমাদের করে তুলুক আরও সুন্দর। ভালোবাসা শুধু বিশেষ দিন-দিবসে নয়, প্রতিটি মুহূর্তে আমদের ভেতর জড়িয়ে থাকুক।